রবীন্দ্রনাথের কাহিনী

রবীন্দ্রনাথের কাহিনী
0
(0)

ভাষা, সাহিত্য, সংগীত শুধু নয়, বাঙালির শিল্প সৃষ্টিতে কবিগুরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যচর্চার কথা আমরা জানি। তাঁর ১৫৭ তম জন্মদিবসে সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ নয়, বরং ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ নিয়েই এই লেখা। যদিও ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ ও সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।


সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শখের চিকিৎসক। তাঁর টেবিলে সাজানো থাকতো বায়োকেমিক ওষুধের নানারকম শিশি। রামগড়ের কাঠের মিস্ত্রির আজন্মের স্নায়বিক ব্যাধি রবি ঠাকুরের ওষুধ খেয়ে সেরে গেলে তিনি নিজেকে অব্যর্থ খ্যাতিমান ডাক্তার হিসেবে গন্য করতে লাগলেন। সেযুগের বিখ্যাত ডাক্তার নীলরতন সরকার পর্যন্ত প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন যে রোগীর সেই টাইফয়েড আক্রান্ত রোগী রানী মহলানবিশকে একান্ত নিজের চিকিৎসায় পুরোপুরি সারিয়ে তুললেন শখের ডাক্তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ ইউরোপের বাইরে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ‘Songs Offerings’ -এর জন্য। যদিও এই নোবেল পুরস্কার তিনি সরাসরি গ্রহন করেননি, পুরস্কারটি ব্রিটিশ দূতালয়ের মাধ্যমে কলকাতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নোবেল পুরস্কারের টাকায় তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী |কিন্তু আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে তৎকালীন ভারতের অর্থনৈতিক দুর্দশা দেখে আবেগতাড়িত রবীন্দ্রনাথ প্রথমে তাঁর পুরস্কারের টাকা দিয়ে সমবায় ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার কথা ভাবেন।

কবিগুরু আট বছর বয়স থেকে সাহিত্যচর্চায় পদার্পণ করলেও ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় ষাট-টি বসন্ত অতিক্রম করার পরে। তিনি তাঁর জীবদ্দশার শেষ ১৭ বছরে প্রায় ৩০০০ টি ছবি আঁকেন।

পিতার মতো রবীন্দ্রনাথও ভ্রমণপিপাসু ছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি ৫টি মহাদেশের প্রায় ৩০ টি দেশে পায়ের ছাপ রেখে গেছেন। দীর্ঘ ভ্রমণকালের মধ্যে তিনি ৪ বার বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা পরস্পর পরস্পরের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন।

গান্ধীজির সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কের কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ উপাধিটি কবিগুরুই দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের কয়েকটি অধিবেশনে উপস্থিতও থাকতেন। তাঁর রচিত ‘জন গন মন’ ১৯১১ সালে অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে উদ্বোধনী সংগীত হিসাবে গাওয়া হয়, এবং পরবর্তীকালে জাতীয় সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। কিন্তু আরও একটি দেশের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের রচনার ফসল, সেটি হল শ্রীলঙ্কা।

মহাত্মা’ উপাধি দেওয়া ছাড়াও আরও এক ভারতীয়ের নামকরণ করেন রবীন্দ্রনাথ। শিশুটির মা তাঁর ছেলের নামকরণ করে দেওয়ার আর্জি জানালে তিনি এমন একটি নাম দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন যা গোটা মর্ত্যে নেই। সেই শিশু আজ নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন নামে পরিচিত।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

Leave a Reply